বরিশাল: স্বাস্থ্যখাত সংস্কার আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মহিউদ্দিন রনি বলেন, সবাইকে স্পষ্ট ম্যাসেজ দিতে চাই, তরুণদের কেউ অবজ্ঞা করবেন না, আমরা আপনাদের সহযোগিতা প্রত্যাশী। ভিন্ন চিন্তাভাবনা করা ভালো তবে কারও ক্ষতি করে নয়। আমরা প্রত্যেকটি রাজনৈতিক দলের সহযোগিতা চাচ্ছি, যাতে টেকসই একটা সমাধান আসে এবং রূপরেখা আসে। আর সেই টেকসই সমাধানের জন্য আমরা একটি লিখিত আশ্বাস এবং একটি রোডম্যাপও যেন কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে পাই।

মঙ্গলবার (২৬ আগস্ট) দুপুরে নগরীর বরিশাল প্রেসক্লাবে অনুষ্ঠিত দেশের সব সরকারি হাসপাতালের অব্যবস্থাপনা, হয়রানি ও ভোগান্তির বিরুদ্ধে চলমান আন্দোলনের চার দফা দাবি ও করণীয় বিষয়ক মতবিনিময় সভায় এ কথা বলেন তিনি।

এসময় মহিউদ্দিন রনি আরও বলেন, এ আন্দোলন নিয়ে অনেকে বলেছেন রাজনৈতিক অ্যাজেন্ডা বাস্তবায়ন করতে এসেছি আমরা। কেউ বলেছেন টাকা খাওয়ার জন্য এখানে এসেছি আবার কেউ বলেছেন টেন্ডার বাণিজ্য করার জন্য এসেছি কিন্তু আদতে এগুলোর সত্যতা এখন পর্যন্ত কেউ প্রমাণ দিতে পারেনি। তবে আমরা এর প্রমাণ চাই। আর এ কথাগুলো কিন্তু তৈরি হয়েছে বিভিন্ন রাজনৈতিক মহল থেকে যার প্রমাণ আমাদের কাছে আছে। মহিউদ্দিন রনি কমিউনিটি ক্লিনিকের দুইশত কোটি টাকা খাওয়ার জন্য এখানে এসেছে এরকম বিষয় আওয়ামী লীগের একজন কর্মীর ‍গুজব সেল থেকে প্রচার হচ্ছে এমন প্রমাণ আমাদের কাছে আছে। আর সেই আওয়ামী লীগের গুজব সেলের তথ্য বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরা শেয়ার দিয়েছে।

তিনি বলেন, আমরা শিক্ষার্থী পড়াশুনার টেবিলে ফিরে যেতে হবে। তবে তার আগে স্বাস্থ্যখাত সংস্কারের ক্ষেত্রে আমরা টেকসই সমাধান চাই, আর এ লক্ষ্যে আমরা বরিশালের সকল সন্তানদের আমন্ত্রণ জানিয়েছি। বরিশালের সন্তান ট্যাগটা অ্যানআফ না হওয়ায় আমরা রাজনৈতিক সজ্ঞায়নের মধ্যে আপনাদের মতবিনিময় সভায় নিয়ে আসছি। আমরা যখন লাইব্রেরিতে ফিরে যাবো, ক্লাসে ফিরে যাবো তখন যে আবার ট্রলি সিন্ডিকেট, অ্যাম্বুলেন্স সিন্ডিকেটসহ স্বাস্থ্যখাতে অনিয়ম-অব্যবস্থাপনা হবে না এটার অ্যাডভোকেসি করবে রাজনৈতিক দলের নেতা কর্মীরা। আর মানুষের কথা না বললে সেই রাজনৈতিক দলের দরকার কী?

রনি বলেন, আপনারা যারা বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরা আছেন তারা অপপ্রচার না চালিয়ে আমাদের পাশে আসুন, সহযোগিতা করুন।আমরা সবাই শিক্ষার্থী আমাদের ভীষণ আরও বড়। আমাদের চিন্তার জগৎ শুধু ছোট টেন্ডারের মধ্যে না, আমাদের চিন্তার জগতটা পুরো মহাবিশ্ব জুড়ে। আপনারা কেউ বলছেন এমপি প্রার্থী হওয়ার জন্য, কেউ বলছেন সিটি মেয়র হওয়ার জন্য, কেউ কেউ বলছেন ক্ষমতাসীন দলে যোগ দেয়াড় জন্য কিন্তু আমাদের জগতটা আপনার এ চিন্তা জগতের বাহিরে অনেক উপরে আছে।

তিনি বলেন, বরিশালে বর্তমানে ১ লাখ অনলাইন ইউজার আছে যারা আমাদের এ আন্দোলনের সাথে রেগুলার যুক্ত আছে, সোশ্যালি-ভার্চুয়ালি কানেক্টেড আছে। অনেকেই বরিশাল-৫ আসনের কথা বলেছেন, এ আসনের ভোটার কিন্তু ৫ লাখ । আর এই ৫ লাখ ভোটারের গ্রহণ যোগ্যতা পেতে হলে আপনাকে ১ লাখ তরুণ ভোটারকে গুরুত্ব দিতে হবে। আমরা হয়ত ক্ষমতায় যাওয়ার লোভ নিয়ে আসিনাই, আমাদের ক্ষমতার যাওয়ার চিন্তা ভাবনা নেই, কিন্তু কে আমাদের প্রতিনিধি হবে সেই সিদ্ধান্তটা আমরা নিতে পারি। প্রতিনিধি নির্বাচনে আমরা বড় একটা ফ্যাক্টর হয়ে দাঁড়াবো।

রনি বলেন, ডান নাই, বাম নাই, মধ্যপন্থা নাই; জামায়াত হোক, বিএনপি হোক, চরমোনাই হোক, এনসিপি হোক যে বা যারা স্বাস্থ্যখাত সংস্কার আন্দোলনে দাবিগুলোর বিষয়ে সহযোগিতা করবেন নেক্সট নির্বাচনে আমাদের ভোটটা আমরা তাদেরই দেব। কথা ক্লিয়ার কাট, এখানে কোন গড়িমসি নাই, দ্বিমত নাই। আজ এসে সহযোগিতা করবেন , কাল থেকে আমাদের সবার ভোট আপনার পাল্লায় যাবে।আর হেল্প না করলে আমরা বিকল্প চিন্তা করবো। কে আমাদের একটু হেল্প করছে, কে আমাদের জন্য একটু খানি নামছে, যে আমাদের জন্য একটু ভয়েস রেইজ করছে তাকেই আমরা জনপ্রতিনিধি বানাবো।

তিনি বলেন, চলমান আন্দোলনের কারণে কিছু সিন্ডিকেট ভাঙা হলেও, কিছু সমস্যার সমাধান করা হলেও কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে এখনও আমরা পৌঁছাতে পারিনি। আমরা চাই আমাদের আন্দোলনের দাবিগুলোর যেন একটা টেকসই সমাধান আসে। আর সেই টেকসই সমাধানের জন্য আমরা একটি লিখিত আশ্বাস এবং একটি রোডম্যাপও যেন কর্তৃপক্ষ দেয়।

স্বাস্থ্যখাত সংস্কারকারী বরিশালবাসীর ব্যানারে এ সংবাদ সম্মেলনে সুশীল সমাজ ও রাজনৈতিক বিভিন্ন দলের প্রতিনিধিবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

Print this entry

বরিশাল: স্বাস্থ্যখাত সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের হামলায় বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ (শেবাচিম) হাসপাতালের একজন চিকিৎসকসহ তিনজন গুরুতর আহত হওয়ার ঘটনায় নিরাপদ কর্মক্ষেত্র নিশ্চিত করার দাবিতে হাসপাতালের চিকিৎসক, নার্স ও স্টাফরা কর্মবিরতিতে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। যদিও হাসপাতাল পরিচালক সবাইকে ধৈর্য ধরার আহ্বান জানিয়েছেন।

শেবাচিম হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এ কে এম মশিউল মুনীর জানান, বৃহস্পতিবারের ঘটনার পর থেকেই হাসপাতালের স্টাফরা নিরাপত্তা নিয়ে কিছুটা শঙ্কায় ছিলেন। এরপর রোববার ১৭ আগস্ট দুপুরের দিকে শিক্ষার্থীরা একটি মিছিল নিয়ে হাসপাতালের প্রধান ফটকের সামনে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ শুরু করলে চিকিৎসকসহ সংশ্লিষ্টদের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দেয়। পরে বেলা ৩টার দিকে একজন চিকিৎসক, একজন স্টাফ ও একজন নারী আহত হয়েছেন বলে খবর পাওয়া যায়।

পরিচালক বলেন, আহতদের মধ্যে দুইজন আমার সঙ্গে দেখা করেছেন। আর এর পর পরই হাসপাতালের সর্বস্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারী প্রতিনিধিরা আমার কাছে এসেছেন এবং কর্মস্থল নিরাপদ না হলে কর্মবিরতিতে যাওয়ার কথা বলেছেন। তবে আমি তাদের ধৈর্য ধরার জন্য বলেছি এবং রোগীদের সেবা চালিয়ে যেতে বলেছি। সোমবার সকাল ১০টায় সব বিভাগীয় প্রধানসহ বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিয়ে বৈঠকের আহ্বান জানিয়েছি। সেখানে বর্তমান পরিস্থিতিতে করণীয় নিয়ে আলোচনা হবে।

হাসপাতালের স্টাফ ফয়সাল রাব্বি জানিয়েছেন, বেলা ২টার কিছু আগে মহিউদ্দিন রনির নেতৃত্বে শিক্ষার্থীরা একটি মিছিল নিয়ে বান্দরোড হয়ে হাসপাতালের প্রধান ফটকের সামনে অবস্থান নেন। প্রথমে তারা সেখানে দাঁড়িয়ে বিক্ষোভ করলেও একপর্যায়ে গেট ভাঙার চেষ্টা করেন। তবে পুলিশ ও হাসপাতালের আনসাররা তা প্রতিহত করেন। পরে ছাত্ররা বাইরে থেকে হাসপাতালের ভেতরে দাঁড়িয়ে থাকা স্টাফদের লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করেন। এতে বাহাদুর নামে এক স্টাফ মাথা ফেটে গুরুতর আহত হন। এ ছাড়া দিলীপ রায় নামে একজন চিকিৎসককে শিক্ষার্থীরা মারধর করে গুরুতর আহত করেছেন।

অপরদিকে হাসপাতালের মিডলেভেল
ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ডা. শাখাওয়াত হোসেন সৈকত বলেন, এক ডাক্তারের মাথা ফাটানো হয়েছে, একজনের পায়ে পেটানো হয়েছে, একজন স্টাফের মাথা ফাটিয়ে দেওয়া হয়েছে। এভাবে চলতে থাকলে কীভাবে কাজ করব? এতদিন রোগীদের মুখের দিক তাকিয়ে সব সহ্য করেছি। কিন্তু এখন সমাধান না হওয়া পর্যন্ত জরুরি বিভাগ ও অ্যাডমিশন বিভাগ ছাড়া বাকি সবকিছুতে আমরা কর্মবিরতিতে যাচ্ছি।

অপরদিকে শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন, গত বৃহস্পতিবার স্বাস্থ্যখাত সংস্কারের দাবিতে হাসপাতাল প্রাঙ্গণে অনশনে থাকা শিক্ষার্থীদের ওপর স্টাফরা হামলা করেন। সেই হামলার প্রতিবাদে বেলা ১১টায় বরিশাল নগরীর অশ্বিনী কুমার হল প্রাঙ্গণ থেকে প্রতিবাদ মিছিল বের করা হয়। প্রতিবাদ মিছিলটি নগরীর বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে বান্দরোড হয়ে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সামনে এসে শেষ হয়। সেখানে শিক্ষার্থীরা হামলাকারী পলাতক ফ্যাসিস্ট সরকারের অনুসারীদের গ্রেপ্তার ও দালালমুক্ত হাসপাতালের দাবিতে স্লোগান দেন। পাশাপাশি উপস্থিত পুলিশ প্রশাসনের কর্মকর্তাদের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা হাসপাতাল পরিচালকের মুখ থেকে হামলার ঘটনার বিচার নিশ্চিতের কথা শোনার দাবি তোলেন। এরই মধ্যে হাসপাতাল ভবনের সামনে থেকে মুখোশধারী শতাধিক লোক শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে গালাগাল দেওয়া, ইট নিক্ষেপসহ উসকানিমূলক কার্যক্রম পরিচালনা করেন। এ সময় মুখোশধারীদের হাতে দেশীয় অস্ত্র দেখা যায়। পরে বিষয়টি পুলিশ প্রশাসনকে অবগত করা হলে তারা কোনো পদক্ষেপ না নিলে পালটাপাল্টি ইট-পাটকেল ছোড়ার ঘটনা ঘটে।

তবে বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-কমিশনার মোহাম্মদ ইমদাদ হুসাইন বলেন, দুই-একজন পরিস্থিতি ঘোলাটে করার চেষ্টা করলেও আমরা তা নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসি। বর্তমানে হাসপাতাল এবং আশপাশের পরিবেশ শান্ত রয়েছে।

আন্দোলনের সংগঠক মহিউদ্দিন রনি জানিয়েছেন, শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার বিচার ও স্বাস্থ্যখাত সংস্কার দাবির যৌক্তিক দৃশ্যমান অগ্রগতি না হওয়া পর্যন্ত আমাদের আন্দোলন চলবে।

Print this entry