 
	                            						বরিশাল: স্বাস্থ্যখাত সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের হামলায় বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ (শেবাচিম) হাসপাতালের একজন চিকিৎসকসহ তিনজন গুরুতর আহত হওয়ার ঘটনায় নিরাপদ কর্মক্ষেত্র নিশ্চিত করার দাবিতে হাসপাতালের চিকিৎসক, নার্স ও স্টাফরা কর্মবিরতিতে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। যদিও হাসপাতাল পরিচালক সবাইকে ধৈর্য ধরার আহ্বান জানিয়েছেন।
শেবাচিম হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এ কে এম মশিউল মুনীর জানান, বৃহস্পতিবারের ঘটনার পর থেকেই হাসপাতালের স্টাফরা নিরাপত্তা নিয়ে কিছুটা শঙ্কায় ছিলেন। এরপর রোববার ১৭ আগস্ট দুপুরের দিকে শিক্ষার্থীরা একটি মিছিল নিয়ে হাসপাতালের প্রধান ফটকের সামনে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ শুরু করলে চিকিৎসকসহ সংশ্লিষ্টদের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দেয়। পরে বেলা ৩টার দিকে একজন চিকিৎসক, একজন স্টাফ ও একজন নারী আহত হয়েছেন বলে খবর পাওয়া যায়।

পরিচালক বলেন, আহতদের মধ্যে দুইজন আমার সঙ্গে দেখা করেছেন। আর এর পর পরই হাসপাতালের সর্বস্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারী প্রতিনিধিরা আমার কাছে এসেছেন এবং কর্মস্থল নিরাপদ না হলে কর্মবিরতিতে যাওয়ার কথা বলেছেন। তবে আমি তাদের ধৈর্য ধরার জন্য বলেছি এবং রোগীদের সেবা চালিয়ে যেতে বলেছি। সোমবার সকাল ১০টায় সব বিভাগীয় প্রধানসহ বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিয়ে বৈঠকের আহ্বান জানিয়েছি। সেখানে বর্তমান পরিস্থিতিতে করণীয় নিয়ে আলোচনা হবে।
হাসপাতালের স্টাফ ফয়সাল রাব্বি জানিয়েছেন, বেলা ২টার কিছু আগে মহিউদ্দিন রনির নেতৃত্বে শিক্ষার্থীরা একটি মিছিল নিয়ে বান্দরোড হয়ে হাসপাতালের প্রধান ফটকের সামনে অবস্থান নেন। প্রথমে তারা সেখানে দাঁড়িয়ে বিক্ষোভ করলেও একপর্যায়ে গেট ভাঙার চেষ্টা করেন। তবে পুলিশ ও হাসপাতালের আনসাররা তা প্রতিহত করেন। পরে ছাত্ররা বাইরে থেকে হাসপাতালের ভেতরে দাঁড়িয়ে থাকা স্টাফদের লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করেন। এতে বাহাদুর নামে এক স্টাফ মাথা ফেটে গুরুতর আহত হন। এ ছাড়া দিলীপ রায় নামে একজন চিকিৎসককে শিক্ষার্থীরা মারধর করে গুরুতর আহত করেছেন।
অপরদিকে হাসপাতালের মিডলেভেল
ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ডা. শাখাওয়াত হোসেন সৈকত বলেন, এক ডাক্তারের মাথা ফাটানো হয়েছে, একজনের পায়ে পেটানো হয়েছে, একজন স্টাফের মাথা ফাটিয়ে দেওয়া হয়েছে। এভাবে চলতে থাকলে কীভাবে কাজ করব? এতদিন রোগীদের মুখের দিক তাকিয়ে সব সহ্য করেছি। কিন্তু এখন সমাধান না হওয়া পর্যন্ত জরুরি বিভাগ ও অ্যাডমিশন বিভাগ ছাড়া বাকি সবকিছুতে আমরা কর্মবিরতিতে যাচ্ছি।

অপরদিকে শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন, গত বৃহস্পতিবার স্বাস্থ্যখাত সংস্কারের দাবিতে হাসপাতাল প্রাঙ্গণে অনশনে থাকা শিক্ষার্থীদের ওপর স্টাফরা হামলা করেন। সেই হামলার প্রতিবাদে বেলা ১১টায় বরিশাল নগরীর অশ্বিনী কুমার হল প্রাঙ্গণ থেকে প্রতিবাদ মিছিল বের করা হয়। প্রতিবাদ মিছিলটি নগরীর বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে বান্দরোড হয়ে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সামনে এসে শেষ হয়। সেখানে শিক্ষার্থীরা হামলাকারী পলাতক ফ্যাসিস্ট সরকারের অনুসারীদের গ্রেপ্তার ও দালালমুক্ত হাসপাতালের দাবিতে স্লোগান দেন। পাশাপাশি উপস্থিত পুলিশ প্রশাসনের কর্মকর্তাদের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা হাসপাতাল পরিচালকের মুখ থেকে হামলার ঘটনার বিচার নিশ্চিতের কথা শোনার দাবি তোলেন। এরই মধ্যে হাসপাতাল ভবনের সামনে থেকে মুখোশধারী শতাধিক লোক শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে গালাগাল দেওয়া, ইট নিক্ষেপসহ উসকানিমূলক কার্যক্রম পরিচালনা করেন। এ সময় মুখোশধারীদের হাতে দেশীয় অস্ত্র দেখা যায়। পরে বিষয়টি পুলিশ প্রশাসনকে অবগত করা হলে তারা কোনো পদক্ষেপ না নিলে পালটাপাল্টি ইট-পাটকেল ছোড়ার ঘটনা ঘটে।
তবে বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-কমিশনার মোহাম্মদ ইমদাদ হুসাইন বলেন, দুই-একজন পরিস্থিতি ঘোলাটে করার চেষ্টা করলেও আমরা তা নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসি। বর্তমানে হাসপাতাল এবং আশপাশের পরিবেশ শান্ত রয়েছে।
আন্দোলনের সংগঠক মহিউদ্দিন রনি জানিয়েছেন, শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার বিচার ও স্বাস্থ্যখাত সংস্কার দাবির যৌক্তিক দৃশ্যমান অগ্রগতি না হওয়া পর্যন্ত আমাদের আন্দোলন চলবে।
 
        

 
                                         
                                         
                                         
                                         
                                        
 
                            