 
	                            						
বরিশাল: আমার বাংলাদেশ পার্টির সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান ফুয়াদ বলেছেন, জনআকাঙ্ক্ষাকে যদি আমরা রিড করতে না পারি, সময়কে যদি রিড করতে না পারি, ৯১ অথবা ২০০১ এর মানদণ্ড দিয়ে ২০২৫ কে পড়বার চেষ্টা করি, তাহলে সেটা আমাদের জন্য ভুল হবে।
ডাকসু নির্বাচনটা কিন্তু আগামী দিনের রাজনীতির একটি নির্বাচনী গ্রামার আমাদের হাতে তুলে দিয়েছে। আমরা যেন কেউই ৯১, ৯৬, ২০০১ এর ম্যাট্রিক্স দিয়ে না মাপি। মাপলে সবাই ভুল করবো। কারণ এটাই একটি নতুন ম্যাট্রিক্স আগামী দিনের রাজনীতির।
শুক্রবার (১২ সেপ্টেম্বর) বেলা সাড়ে ১১ টায় বরিশাল প্রেসক্লাবের হলরুমে আয়োজিত বরিশালের উন্নয়ন ও সমসাময়িক বিষয় নিয়ে আয়োজিত প্রেস ব্রিফিং-এ আমার বাংলাদেশ পার্টির সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান ফুয়াদ প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।
এসময় তিনি আরও বলেন, ডাকসু নির্বাচনকে যেভাবে ইসলামপন্থিদের বিজয়, জামায়াত-শিবিরের বিজয়, জঙ্গিবাদ-মৌলবাদের উত্থান, দক্ষিণপন্থিদের উত্থান হিসেবে পড়ার চেষ্টা হচ্ছে। এভাবে পড়ার গ্রামারটাকে আসলে আমি মনে করি তরুণদের বুঝতে না পারার সমস্যা। গণঅভ্যুত্থানকে আওয়ামী লীগ যেভাবে বুঝতে পারছে না, ডাকসু নির্বাচনকেও বিএনপিসহ অনেক বুদ্ধিজীবী, বাম বলয়ের লোকেরাও বুঝতে পারছে না।
তিনি বলেন, নির্বাচন আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি ছাড়া ইনক্লুসিভ হবে না এই বক্তব্য যারা দিচ্ছে ডাকসু নির্বাচন সেটিকে অলরেডি ভুল প্রমাণিত করেছে।শুধু জগন্নাথ হলের ভোটের গ্রামারটা পড়লেই বোঝা যাচ্ছে আওয়ামী লীগের বাহিরে দল ও প্রার্থী এ দেশে রয়েছে এবং তারা জামায়াত শিবিরে ভোট দিবে না। আর এমন জায়গাতে ছাত্রলীগের সাথে আঁতাত করে জামায়াত-শিবিরের প্যানেল ভোট পেয়েছে এটা খুবই রং রিডিং হবে।
তিনি বলেন, অনেকগুলো দিবো না ভোট দিন শেষে গিয়ে শিবিরের প্যানেলে জমা হয়েছে, অর্থাৎ ভোটগুলো শিবিরের না। শিবিরকেও মাথায় রাখতে হবে এত খুশি হওয়ার কিছু নেই।
প্রবাকান্ডা করে ট্যাগ করার বিষয়ে তিনি বলেন, আমি জানি তুমি জানো সাদিক কায়েম পাকিস্তানি এই স্লোগান দেয়া হয়েছে ঢাবি ক্যাম্পাসে কিন্তু ছেলেমেয়েরা যারা ২৪ এর আন্দোলন করেছে তারা সবাই সাদিক কায়েমকে চেনেন। ওরা একসাথে আন্দোলন সংগ্রাম করেছে। হঠাৎ করে এই ছেলেটাকে পাকিস্তানি বলায় সাধারণ শিক্ষার্থীরা ভালোভাবে বিষয়টি নেয়নি। আবার ফরহাদ ছেলেটা পরিচিত ছিল না, ওর প্রার্থীতা বাতিলে হঠাৎ করে এক সপ্তাহ আগে একটা রিট করছে, যা করে ওকে জাতীয়ভাবে পরিচিত করিয়ে দেয়া হয়েছে। সে কিন্তু ফেবারিট ক্যান্ডিডেট ছিল না। তারপর বাম বলায়সহ কিছু বিষয়টি নিয়ে কিছু জাতীয় পত্রিকার ডেলিভারিটলি কিছু অজনপ্রিয় প্রার্থীকে নিয়ে প্রথম পাতায় কালারফুল তিন কলাম, চার কলামের নিউজ করে এমনভাবে উপস্থাপন করেছে যে তাকে অলরেডি ভিপি বানিয়ে দেয়া হয়েছিল। অথচ সে ব্যাপক ভোটে সে হারছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো ছোট জায়গায় সাড়ে ৬ শত সাংবাদিক ডাকসু নির্বাচন কাভার করছে। এখানে চুরি করবেন কোথায়? প্রত্যেক বুথে সিসি ক্যামেরা ছিল, এলইডিতে লম্বা করে কাগজে কাগজে ভোট গণনা হয়েছে সারা রাত। আপনি চাইলেও ৮০ এর দশকের দুই নাম্বারি রাজনীতি- “ভোট জালিয়াতি হয়েছে, কেন্দ্র দখল হয়ে গেছে”- এইরকম গুজব ছড়িয়ে দিলেন আর সেটা সবাই মেনে নিবে এটা কিন্তু বাস্তবে হয়নি। জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ে গতকাল ছাত্রী হলে ছাত্রদলের ভিপি ঢুকছে, তার প্রতিবাদ মেয়েরাই করছে। সেখানে ভোট জালিয়াতির কথা তোলা হলে পাল্টা বলা হয়েছে, আপনার প্যানেলের মেয়েরা এখানে কেন আসলো না? এমন প্রশ্ন উঠেছে।
তিনি বলেন, দুই নাম্বারি চক্করের পলিটিক্স এখন আর চলবে না। এটা আমাদের সবার জন্য লেসন। যে যেই দলের রাজনীতি করি, ন্যূনতম স্বচ্ছতা, ভদ্রতা, সততা যদি না থাকে আগামী দিনের পলিটিক্স ঠিকাদারীর রাজনীতি দিয়ে করতে পারবেন না। ঠিকাদারীর পলিটিক্স ইজ ডেথ। ৭১ব্যবসা, ২৪ ব্যবসা, চেতনা ব্যবসা, কেনা-বেচার ব্যবসা দিয়ে আপনি পলিটিক্স করতে পারবেন না, আমরাও পারবো না। পলিটিক্সে স্বচ্ছ হতে হবে এখন আপনাকে। যে ভদ্র, বিনয়ী, স্বচ্ছতা আছে, কথা কাজে মিল আছে, যাকে দেখে মানুষ মনে করে তার কাজে লাগবে, তাকে মানুষ দলমত ছাড়া ভোট দিবে। মার্কা দেখে, দল দেখে ভোট তরুণরা আর দিবে না এখন।
তিনি বলেন, ডাকসু নির্বাচন ফেয়ার হয়েছে এটা আমাদের কনক্লুশন,এখানে কোন ইসলামপন্থীর বিজয় হয়নি, এটার মধ্য দিয়ে জামায়াত-শিবির আগামী দিনে দেশে অনেক বড় ইসলাম কায়েম করে ফেলবে এটার সম্ভবনা দেখছি না। এটার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে, মৌলবাদ, জঙ্গি কিংবা দক্ষিনপন্থিসহ কারও কোন উত্থান হয়নি। এখানে চলমান রাজনৈতিক কালচার ফেল করেছে।
তিনি বলেন, দেশ কিন্তু শান্ত হয়নি, আমরা কিন্তু এখনও ভলকানোর উপরে বাস করছি। কেউ যদি মনে করেন ফেব্রুয়ারির পরে দেশ সুইজারল্যান্ড হয়ে যাবে, একদম জান্নাতি পরিবেশ বিরাজ করবে, মোটেই তা হবে না। যে কোনো সময় এখানে আবার নেপাল, শ্রীলঙ্কা, ইন্দোনেশিয়া, জর্জিয়া ফিরে আসতে হবে। সকল রাজনৈতিক দলকে মনে রাখতে হবে তরুণরা পলিটিক্যালি অনেক কনশাছ, প্রচণ্ড রকম প্রিপেয়ার্ড রাস্তায় নেমে আসার জন্য। তাদের খাইসলতকে যদি আপনারা ট্যাগ দেন, পাকিস্তানি বানান, মৌলবাদী বানান এই রাজনীতি পরাজিত হয়ে গেছে এটা জিতবে না। তরুণদের আকাঙ্ক্ষাতে তার জায়গা থেকে বুঝি এবং সম্মান করি।তাদের আকাঙ্ক্ষাতে অসম্মান করলে কালেকটিভলি আমরা সবাই হেরে যাবো।
প্রেস ব্রিফিং এ আমার বাংলাদেশ পার্টি বরিশাল জেলার সদস্য সচিব জি এম রাব্বি, যুগ্ম আহবায়ক সুজন তালুকদার, বরিশাল মহানগরের যুগ্ম সদস্য সচিব ডা:তানভীর আহমেদ, সদস্য হায়দার ভূইয়া, নাজমুল মুন্নাসহ নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
 
        

 
                                         
                                         
                                         
                                         
                                        

 
                            
 
                                     
                                    